চিরুনির আর তুমি

 ১. চুল বাঁধা আর সংসার

একদিন তুমি বলো, চুল বাঁধো ঠিকমতো, না হলে এলোমেলো লাগে।

আমি বললাম "সংসারও তো ঠিক এমন— একটু এলোমেলো।"


তুমি কপট রাগ দেখিয়ে চলে যাও,

আমার আঙুলে থেকে যায় তোমার চুলের গন্ধ।


চুল বাঁধতে শেখোনি তখনো তুমি

আমি শিখিনি— কিভাবে আঁচড়ালে কষ্ট কমে।


২. চিরুনির দাঁত ভাঙে

একদিন চিরুনির একটা দাঁত ভেঙে গেল,

তুমি বললে, সবকিছুই পুরনো হয়ে যায় একদিন।


আমি চুপ করেছিলাম,

কারণ সম্পর্কও এমন— অল্পেই ভেঙে পড়ে।


ভাঙা দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা চুল,

মনে পড়ে এক ফাঁকা দুপুর।


৩. সন্ধ্যায় চিরুনি

সন্ধ্যায় তুমি বসে চুল শুকাও,

চিরুনি একেকবার ঠেকে যায় গালেও।


আমি বলি— আহত হচ্ছো?

তুমি হাসো— সৌন্দর্য পেতে একটু ব্যথা লাগেই।


তখন আমি ভাবি—

ভালোবাসাও কি এমনই?


৪. চুল আঁচড়ে সন্ধ্যা নামে

চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে সন্ধ্যা নামে,

পাখিরা ফেরে, থেমে যায় বাতাস।


তুমি আয়নার দিকে তাকাও,

আমি তোমার পেছনে, প্রতিফলনে মিশে থাকি।


চিরুনি থামে এক জায়গায় এসে,

যেখানে একদিন জট লেগেছিল চুমুতে।


তুমি চুপ করে তাকাও—

আমি জানি, সেখানে এখনো ব্যথা রয়ে গেছে।


৫. চিরুনি ও চুমু

চিরুনির দাঁতের ফাঁকে একদিন

রেখে দিয়েছিলে ঠোঁটের ছোঁয়া।


আমি বলেছিলাম, এইটুকু স্পর্শই বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট।

তুমি হেসে বলেছিলে, তুমি অত নাটুকে!


আজও সেই চিরুনি আমার কাছে,

তোমার ঠোঁট তো নেই, ছোঁয়া কি থেকে যায়?


জানি না, তবু মাঝেমাঝে

চিরুনির দাঁত ছুঁয়ে দেখি— তুমি এখনো আছো কিনা।


৬. অপেক্ষার চুল

চুল শুকায় ধীরে— রোদে, বাতাসে, সময়ে।

তুমি বলো— এভাবেই অপেক্ষা করতে শিখেছি।


আমি চুপ করে মাথা নিচু করি,

চিরুনি হাতে থাকে, অথচ সাহস হয় না আঁচড়ানোর।


তুমি চুল মেলো,

আমি ভাবি— মনেরও যদি এমন ছায়া থাকত!


৭. একদিনের গল্প

একদিন তুমি বললে—

তুমি কি রোজই আমার চুল আঁচড়াতে পারবে?


আমি হেসে বলেছিলাম—

সারা জীবন শুধু জট ছাড়াবো।


সেদিন সন্ধ্যা গলে গিয়েছিল ধীরে ধীরে,

আর তুমি চুপ করে বসে ছিলে বালিশে।


আজো আমি বলি আয়নাকে—

“চিরুনিটা এখনও আমার কাছে আছে।”


৮. চিরুনির ফাঁকে সময়

চিরুনির দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে সময়,

তুমি যেদিন কাঁদলে হঠাৎ


আমি বলিনি কিছু

শুধু তোমার চুল আঁচড়েছিলাম ধীরে।


তুমি জিজ্ঞেস করলে— তুমি এখনো আছো?

আমি বললাম— প্রতিটি দাঁতের গায়ে জড়িয়ে।


তুমি বললে— তাহলে ব্যথাও থাকবে সেখানে।

আমি বললাম— ভালোবাসা মানেই ব্যথার ছায়া।


৯. শেষ জট

তুমি বললে— আজ চুলটা নিজেই গুছিয়ে নিই।

আমি বললাম— এটাই তবে শেষ?


তুমি বললে— জীবনের একটা জট বাকি ছিল,

তাই নিজেই খুলে দিচ্ছি।


আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম,

চিরুনি কাঁপছিল হাতে।


তুমি দূরে গিয়ে দাঁড়ালে,

আর আমি বুঝলাম— চুল যেমন, সম্পর্কও খুলে যায় একদিন।


১০. চিরুনি ছেড়ে দিলে

তুমি একদিন বললে—

আর নয়, নিজেই পারি আজ।


আমি চিরুনি নামিয়ে রাখলাম,

তাতে লেগে রইল আমার শিখে যাওয়া যত্ন।


তুমি চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললে—

তোমাকে আর আগের মতো দরকার নেই।


আমি হেসে বলেছিলাম—

শুধু তোমার জটগুলো চিনে আশীষ


১১. শেষ আঁচড়

তোমার চুলে আর জট নেই,

কারণ তুমি এখন অন্য কারো ঘরে।


তবু আমি প্রতিদিন আঁচড়াই শূন্যতাকে,

এই চিরুনিটা আজও সাথ দেয় আমায়।


তাতে লেগে থাকা নেই কোনো সুগন্ধ,

তবু আমি চিনি প্রতিটি দাঁতের ভাষা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন